সহকমীর সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত



কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সঙ্গে যদি বন্ধু ভাবাপন্ন সম্পর্ক না বজায় রাখা যায় তাহলে অসহনীয় হয়ে পড়ে কর্মজীবন। দিনের বেশিরভাগ সময় কর্মজীবী মানুষেরা কর্মক্ষেত্রেই কাটিয়ে থাকেন। অনেকেই নিজের পরিবারের চাইতে বেশি সময় কাটান অফিসের মানুষগুলোর সঙ্গে। তাই সহকর্মীর সঙ্গে এমন সম্পর্ক গড়ে নেয়া উচিত যার মাধ্যমে ব্যক্তিগত জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না এবং কর্মজীবনও শান্তিময় হয়ে উঠবে। হোক সিনিয়র অথবা জুনিয়র সে পোস্টের দিক দিয়ে কিংবা বয়সে, সহকর্মীদের সঙ্গে সুন্দর বন্ধু ভাবাপন্ন মনোভাব বজায় রাখতেই হবে। আসুন জেনে নেই সে জন্য আমাদের কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে।
১. প্রতিদিন কুশল বিনিময় করুন
২. অনুভূতি প্রকাশে সহযোগিতা করুন। মনোযোগ দিয়ে শুনুন। নিজের কোনো বিষয় মিলে গেলে শেয়ার করুন তবে শুধুমাত্র যেটা নিজের। (আরেকজন কর্মীর বিষয়ে কোনো কথা হলে যথাসম্ভব নীরব থাকতে চেষ্টা করুন)। কারণ একজন হয়ত কষ্ট থেকে অন্য কর্মীকে নিয়ে কথাটা বলছে তার অর্থ এই নয়, আপনি সেই সহকর্মীর প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিবেন। আপনার মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি অবশ্যই আপনার ব্যক্তিত্বের শক্তিশালী দিক।
৩. কোনো বিষয়ে দ্বিমত হলে ব্যাপারটা স্বাভাবিকভাবেই নিন। দ্বিমত হতেই পারে। অপরজনের চিন্তার ইতিবাচক মূল্যায়ন করুন। হয়ত সে আপনার চিন্তার মূল্যায়ন করছে না, এতে হতাশ হবেন না। কারণ আপনি যা জানেন, সেটা আরেকজন না জানতেই পারে। একইভাবে সে যা জানে তা আপনার অজানা থাকতেই পারে। সময় নিন। বুঝিয়ে বলুন।
৪. কোনো কারণে কোনো সহকর্মীর সঙ্গে মতের অমিল হলে তা নিয়ে তর্কে জড়িয়ে যাবেন না। রাগারাগি করে অফিসের পরিবেশ নষ্ট করবেন না একেবারেই। এতে সহকর্মী এবং অফিসের অন্যান্য মানুষের মনে নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক তৈরি করছেন আপনি নিজেই। সহকর্মী মাথা গরম করলেও আপনি করবেন না।
৫. একই স্থানের সবকটি মানুষ ভালো হয় না, আবার মন্দও হতে পারে না। আর ভালো খারাপ মিলিয়েই জীবন। সহকর্মীদের সঙ্গে যতোটা সম্ভব মানিয়ে চলার চেষ্টা করা উচিত। ভালোর সঙ্গে ভালো এবং খারাপের সঙ্গে খারাপ নয়, নিজের বিবেচনায় সবার সঙ্গেই সমান সদ্ভাব বজায় রেখে ভালো ব্যবহার করে চলা উচিত।
৬. ভুল কোনো মন্তব্য করে ফেললে বা কাজে কোনো ভুল হলে স্বীকার করুন এবং তা সংশোধন করে নিন। নিজের ভুল অন্য কর্মীর উপরে দেয়া থেকে বিরত থাকুন।
৭. সহকর্মী কোনো কাজে আপনার থেকে এগিয়ে থাকলে তাকে মন থেকেই প্রশংসা করুন। আমরা কেউ কারো মতো না। তাই যার যার জায়গা থেকে একজন ব্যক্তি যোগ্য বা ভালো কাজ করবে এটাই প্রত্যাশিত। হতে পারে আপনার সহকর্মী আপনাকে প্রশংসা করছে না কিংবা সমালোচনা করছে, এতে মন খারাপ করবেন না। কারণ খুব কম মানুষই গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারে।
৮. যথাসম্ভব সহযোগিতা করার চেষ্টা করুন। যদি আপনার পক্ষে সম্ভব না হয়, তাহলে বুঝিয়ে বলুন এবং ক্ষমা চেয়ে নিন। মনে রাখবেন ভুল হলেই শুধু ক্ষমা চাইব তা কিন্তু নয়।
৯. মাঝে মাঝে ফান বা জোকস করুন। রসবোধ ও হাস্যরস অফিসের পরিবেশকে প্রাণোচ্ছল রাখে। তবে বয়স, মনোভাব ও পদ বুঝে ফান করবেন।
১০. কোনো সহকর্মীর জন্মদিন বা আনন্দের কোনো ঘটনায় তাকে শুভেচ্ছা জানান।
১১. কোনো কাজের নির্দেশ থাকলে তাকে অনুরোধ করুন। হোক সে আপনার জুনিয়র। নির্দেশ দেয়ার মত স্বরে কাজ করতে বলবেন না। কারণ এটি মনে ক্ষোভ তৈরি করে। বন্ধু ভাবাপন্ন স্বরে কথা বললে সহকর্মীরা নিজেকে নিরাপদ মনে করে। আর একই ভাবে আপনার সঙ্গে যদি কেউ এভাবে বলে যা আপনার ভালো লাগছে না, সেটি আপনি ওই ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই প্রকাশ করতে পারেন। আপনি যখন তাকে শ্রদ্ধা দেখাবেন, স্বাভাবিকভাবে তিনিও আপনার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে। এর অন্যথাও হতে পারে। কাজ শেষে বিদায় ও শুভেচ্ছা জানান।
আপনার সহকর্মীকে সম্মান করার দায়িত্ব আপনার। কাউকে ছোট করে নয় বরং শ্রদ্ধাভরে অফিসের পরিবেশটা করে ফেলি সহনীয় ও বন্ধু ভাবাপন্ন। অফিসে আমাদের আচরণ হোক সমান দৃষ্টিভঙ্গির ও সম্মানজনক।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Contact for ad