ফেরীওয়ালা থেকে আকিজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা।
মাত্র১৬টাকাপুঁজিনিয়ে১৩বছরবয়সেগলায়ঝুড়িঝুলিয়েকমলালেবুর ফেরিওয়ালা হিসেবেব্যবসাশুরু।এরপর১৯৫২সালেবিড়িরব্যবসার মধ্যদিয়েব্যবসার গতি-প্রকৃতি একেবারে জাদুর মতো বদলেযেতেথাকে।পরবর্তী সময়েযেব্যবসায় হাতদিয়েছেন, সেখানেই সাফল্যপেয়েছেন তিনি।একেএকেতিনিদেশেরউল্লেখযোগ্য ২৩টিশিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠা করে ব্যবসার জাদুকরে পরিণতহন।
এতক্ষণ বলছিলাম আকিজগ্রুপ ও আদ্-দ্বীনের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আকিজ উদ্দীনের জীবনের গল্প।
খুলনারফুলতলাথানারমধ্যডাঙ্গা গ্রামে১৯২৯সালেজন্মনেনশেখআকিজউদ্দীন। শৈশবকেটেছেকঠিনদারিদ্র্যের মধ্যে।স্বপ্নদেখতেনদারিদ্র্য জয়করেএকদিনমাথাউঁচুকরেদাঁড়াবেন। কিন্তুজীবনসংগ্রামের শুরুতেপদেপদেবাধারমুখেপড়েন।সেইবাধাপেরোতেশেখআকিজউদ্দীনের সম্বলছিলসাহস, সততাআরকঠোরপরিশ্রম। এইতিনটিজিনিসকে পুঁজিকরেইশুরুহয়উদ্যোক্তা আকিজউদ্দীনের উত্থানপর্ব।
তিনিদেশেরউন্নয়নওঅর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকারেখেলাখোমানুষের নিয়োগকর্তা হিসেবেইতিহাসে নামলেখান।কিভাবেশুরুহলোতারউত্থান।
ব্যবসা শুরুর পদে পদে বাধা : আকিজ উদ্দীনের বাবাশেখমফিজউদ্দিনছিলেনক্ষুদ্র ব্যবসয়ী। তিনিখুলনারফুলতলাথানারমধ্যডাঙ্গা গ্রামেফলওফসলেরমৌসুমিব্যবসাকরতেন।আর্থিকঅসচ্ছলতার কারণেমা-বাবার একমাত্র সন্তানহয়েওআকিজলেখাপড়া করারসুযোগপাননি।তিনিখুবকাছথেকেদারিদ্র্য দেখেছেন। আরগভীরভাবে বাবারব্যবসাপর্যবেক্ষণ করেছেন। স্বপ্নদেখেছেন। কিন্তুস্বপ্নের কোনোকিনারাকরতেনাপেরে১৯৪২সালেমাত্র১৬টাকাহাতেনিয়েজীবিকার সন্ধানে কিশোরশেখআকিজউদ্দিনখুলনারমধ্যডাঙ্গা গ্রামথেকেবেরহন।ট্রেনেচেপেতিনিকলকাতায় যান।কলকাতার শিয়ালদহ রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে তিনিরাতকাটাতেন। ওখানেইপাইকারি বাজারথেকেকমলালেবু কিনেফেরিকরেবিক্রিকরেছেন। কিছুদিনকমলালেবুর ব্যবসাকরারপরতিনিএকটিভ্রাম্যমাণ দোকানদেন।কিন্তুএকদিনপুলিশঅবৈধভাবে দোকানদেওয়ারঅভিযোগে তাঁকেধরেনিয়েযায়।কয়েকদিনজেলখেটেমুক্তহয়েআকিজউদ্দিনউদ্ভ্রান্তের মতোকলকাতাশহরঘুরেছেন। কলকাতায় তাঁরসঙ্গেপাকিস্তানের পেশোয়ারের একফলব্যবসায়ীর পরিচয়হয়।আকিজওইব্যবসায়ীর সঙ্গেপেশোয়ারে গিয়েফলেরব্যবসাশুরুকরেন।দুইবছরব্যবসাকরেতাঁরপুঁজিদাঁড়ায়১০হাজারটাকা।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়আকিজবাড়িফিরেআসেন।
উত্থানের গল্প : ১৯৫২ সালেরদিকেবন্ধুরবাবাবিড়িব্যবসায়ী বিধুভূষণেরসহযোগিতায় আকিজউদ্দিনবিড়িরব্যবসাশুরুকরেন।পাশাপাশি তিনিগ্রামগঞ্জ ঘুরেধান, পাট, নারকিলওসুপারিকিনেআড়তেআড়তেবিক্রিকরেছেন। সামান্য কিছুটাকাজমিয়েবাড়িরপাশেবেজেরডাঙ্গা রেলস্টেশনের কাছেএকটিদোকানদেন।কিন্তুদোকানটি আগুনেপুড়েযায়।আকিজসর্বস্বান্ত হয়েপড়েন।পরবর্তীতে তিনিএলাকাবাসীর সহায়তায় ফেরদোকানদেন।পাশাপাশি শুরুকরেনধান, পাট, চালওডালেরব্যবসা। এরপরতিনিসুপারির ব্যবসার সঙ্গেযুক্তহন।রাতজেগেসেইসুপারিছিলেদিতেনতাঁরসহধর্মিণী। এইসুপারিতিনিকলকাতায় পাঠাতেন। সুপারির ব্যবসায় তাঁরবেশলাভহয়।এরপরতিনিবিধুবিড়িরমালিকবিধুভূষণেরপরামর্শে বিড়িরব্যবসায় যুক্তহন।নাভারণের নামকরাব্যবসায়ী মুজাহার বিশ্বাসের সহায়তায় তিনিছোট্টএকটিবিড়িতৈরিরকারখানা গড়েতোলেন।শুরুহয়আকিজেরউত্থানপর্ব।
বিড়িফ্যাক্টরির পর১৯৬০সালেঅভয়নগরে অত্যাধুনিক চামড়ারকারখানা এসএএফইন্ডাস্ট্রিজ, ১৯৬৬সালেঢাকাটোব্যাকো, ১৯৭৪সালেআকিজপ্রিন্টিং, ১৯৮০সালেআকিজট্রান্সপোর্ট, নাভারণপ্রিন্টিং, ১৯৮৬সালেজেসফার্মাসিউটিক্যাল, ১৯৯২সালেআকিজম্যাচ, ১৯৯৪সালেআকিজজুটমিল, ১৯৯৫সালেআকিজসিমেন্ট, আকিজটেক্সটাইল, ১৯৯৬সালেআকিজপার্টিকেল, ১৯৯৭সালেআকিজহাউজিং, ১৯৯৮সালেসাভারইন্ডাস্ট্রিজ, ২০০০সালেআকিজফুডঅ্যান্ড বেভারেজ, একইবছরআকিজঅনলাইন, নেবুলাইন্ক, ২০০১সালেআকিজকরপোরেশন, আকিজকম্পিউটার, আকিজইনস্টিটিউট অ্যান্ড টেকনোলজি, ২০০৪সালেআফিলএগ্রো, ২০০৫সালেআফিলপেপারমিলসপ্রতিষ্ঠা করেন।২০০৬সালের১০অক্টোবর মৃত্যুর আগপর্যন্ত শেখআকিজউদ্দিনঅসংখ্যব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়েতোলেন।এছাড়াতিনিআদ্-দ্বীন ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেস্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকারাখেন।তাঁরমৃত্যুর পরসন্তানরা আরোঅনেকব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়েতোলেন।
আকিজউদ্দিনের ১৫টিসন্তান। ১০ছেলেপাঁচমেয়ে।বড়ছেলেডাক্তার শেখমহিউদ্দিন আদ্-দ্বীনের নির্বাহী পরিচালক ও আকিজ বিড়িরচেয়ারম্যান, অন্যসন্তানদের মধ্যেশেখমোমিনউদ্দিনএসএএফচামড়াফ্যাক্টরির এমডি, শেখআফিলউদ্দিনসংসদসদস্যওআফিলগ্রুপের এমডি, শেখবশিরউদ্দিনআকিজগ্রুপের এমডি।এছাড়াশেখনাসিরউদ্দিন, শেখআমিনউদ্দিন, জামিনউদ্দিন, শেখআজিজউদ্দিন, শেখজামিলউদ্দিনসবাইআকিজগ্রুপের সঙ্গেজড়িত।
বাবারস্মৃতিচারণা করেডাক্তার শেখমহিউদ্দিন বলেন, ‘আমারবাবাআমাদেরবলতেন, আগুনহয়তোমনেরশক্তিদিয়েহাতেচেপেরাখাযায়।কিন্তুক্ষমতাওসম্পদধরেরাখাতারচেয়েআরোঅনেককঠিন।বাবারএইবাণীধারণকরেতাঁরআদর্শেউজ্জীবিত হয়েব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি সমাজসেবার হাল ধরে রেখেছি।’
শেখবশিরউদ্দিনবলেন, ‘বাবারনামাজ-কালামের পরই ছিল ফিন্যানশিয়াল ডিসিপ্লিনের স্থান।এছাড়াতাঁরসময়জ্ঞান ছিলউল্লেখকরারমতো।তিনিকোনোমিটিংয়ে একমিনিটপরেআসেননি। আমিতাঁরএইগুরুত্বপূর্ণ বিষয়দুটিঅনুসরণকরেলাভবানহয়েছি।’
শেখআফিলউদ্দিনবলেন, ‘বাবারমধ্যেকোনোআত্ম-অহমিকাবোধ ছিল না। তিনিসবকিছুগভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেসিদ্ধান্ত গ্রহণকরতেন।তাঁরদূরদর্শিতার কারণেইআকিজগ্রুপসমপ্রসারিত হয়েছে।’
শেখমোমিনউদ্দিনবললেন, ‘বাবারকোনোপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিলনা।কিন্তুতাঁরশিক্ষার প্রতিপ্রেমছিল।তিনিআমাদেরউচ্চশিক্ষা দিয়েব্যবসার পাসপোর্ট দিতেন।তাঁরসততা, ধৈর্যশীলতা, মেধা, সহনশীলতার কারণেইআকিজগ্রুপসাফল্যের শিখরেউঠেছে।’
মধ্যডাঙ্গা গ্রামের শেখআকিজউদ্দিনের নিকটতমপ্রতিবেশী আলীআকবরবলেন, ‘আকিজউদ্দিনের সংসারেসবসময়অভাবলেগেইথাকত।আকিজবাড়িতেথাকতেননা, মাঝেমধ্যে গ্রামেআসতেন।তিনিএসেস্ত্রীসকিনাখাতুনকে সংসারচালানোর জন্যকিছুটাকাদিতেন।কিন্তুতাতেসংসার১৫দিনওচলতনা।আকিজউদ্দিনবাড়িতেএলেতাঁরকাছথেকেটাকানিয়েধারশোধকরতেন।’
তিনিবলেন, ‘আকিজউদ্দিনআমাদেরবলতেন, কারোকোনোদেনারাখবনা।আমিরাতদিনব্যবসার পেছনেছুটছি।আল্লাহআমাকেলাভদেবেন।সেইলাভেরটাকাদিয়েতোমাদের দেনাশোধকরেদেব।’
আকিজউদ্দিন২০০৬সালেমারাযান।তাররেখেযাওয়াব্যবসাওআদর্শএখনোতার স্ত্রী-সন্তানেরা ধরে রেখেছেন।
(সংগৃহীত)